April 18, 2024, 6:40 am

উপসর্গহীন কোভিড রোগী বুস্টার টিকা নিলে কি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে? উঠছে প্রশ্ন

অনলাইন ডেস্ক।
উপসর্গ ছিল খুবই মৃদু। তা সত্ত্বেও করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন বছর ৬৫-র প্রৌঢ়। রিপোর্ট পজ়িটিভ আসায় তাঁর বুস্টার ডোজ়ের সময় পিছিয়ে গিয়েছে আরও তিন মাস। তবে, উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গযুক্ত অনেকেই করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে পরীক্ষা করাচ্ছেন না। আর সেই কারণেই বুস্টার ডোজ় নিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের সংশয়। কারণ, করোনায় আক্রান্ত হলে শরীরে তৈরি হয় অ্যান্টিবডি। সেই অবস্থায় বুস্টার ডোজ় নিলে তা কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন অনেকের প্রশ্ন। তা ছাড়া, উপসর্গহীন কোনও কোভিড রোগী যদি পজ়িটিভ অবস্থাতেই বুস্টার ডোজ় নেন, তা হলে কি শরীরে কোনও বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে? এটাও ভাবাচ্ছে অনেককে।

এক চিকিৎসকের কথায়, “ওমিক্রন যে হারে ছড়াচ্ছে, তাতে কেউই সংক্রমণ থেকে বাদ যাবেন না। তাই বয়স্ক এবং কোমর্বিডিটিতে আক্রান্তদের এমন সংশয় স্বাভাবিক। তবে যাঁরা পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু অধিকাংশই তো পরীক্ষা থেকে দূরে থাকছেন।

কোউইন’-এর তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার পর্যন্ত রাজ্যে বুস্টার ডোজ় পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৭৮ জন। চলতি মাসে এ রাজ্যে পাঁচ-সাড়ে পাঁচ লক্ষ জনকে বুস্টার ডোজ় দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছে স্বাস্থ্য দফতর। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার ন’মাস পরে নেওয়া যাবে বুস্টার ডোজ়। আবার কেউ যদি দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হন, তা হলে সংক্রমিত হওয়ার তিন মাস পরে বুস্টার ডোজ় নিতে হবে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিষেধক প্রদান ব্যবস্থাপনার শীর্ষ কর্তা অসীম দাস মালাকারের কথায়, “শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাতে বেশি দিন থাকে, তার জন্যই আক্রান্ত হওয়ার তিন মাস পরে বুস্টার ডোজ় নিতে বলা হচ্ছে।”

কিন্তু করোনা পরীক্ষা যাঁরা করাচ্ছেন না এবং যাঁরা উপসর্গহীন, তাঁদের ক্ষেত্রে সংশয়টা থেকেই যাচ্ছে। ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল বায়োলজি’র ইমিউনোলজিস্ট দীপ্যমান গঙ্গোপাধ্যায়ও জানাচ্ছেন, উপসর্গহীন কেউ বুস্টার ডোজ় নিলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে গিয়ে সমস্যা তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, “প্রতিষেধক নিলে সঙ্গে সঙ্গে ইমিউন সিস্টেম সক্রিয় হয়ে ওঠে। সেটাই কাম্য। কিন্তু একই সময়ে উপসর্গহীন কোভিড হয়ে থাকলে কারও কারও দেহে সাইটোকাইন বেশি বেড়ে গিয়ে বিপত্তি ঘটতে পারে। সংক্রমণ হয়ে থাকলে সেটাই বুস্টারের মতো কাজ করবে। কাজেই সংক্রমণ চলাকালীন বা সেরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বুস্টার ডোজ় না নেওয়াই ভাল।”
শরীরে অতিরিক্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হলে অত্যধিক ‘ইমিউনোলজিক রিঅ্যাকশন’-এর আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলেই জানাচ্ছেন ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদার। যদিও এর পরীক্ষিত তথ্যপ্রমাণ এখনও নেই। তবু নিয়ম মেনে চলাই উচিত বলে জানাচ্ছেন তিনি এবং অন্য চিকিৎসকেরা।

সিদ্ধার্থবাবু আরও জানাচ্ছেন, উপসর্গহীন এবং সামান্য উপসর্গযুক্ত, অথচ পরীক্ষা না করানো কোভিড রোগীদের শরীরে অ্যান্টিবডি এবং ‘টি মেমরি সেল’ (টি লিম্ফোসাইট কোষ) মজুত থাকা স্বাভাবিক। তিনি বলেন, “সময়ের ব্যবধান না মেনে ওই রোগীদের বুস্টার ডোজ় দিলে লাভ হবে না। কারণ, দেহে মজুত অ্যান্টিবডি প্রতিষেধকের অ্যান্টিজেনকে ‘নিউট্রালাইজ়’, অর্থাৎ নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে।”

স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান, চিকিৎসক শান্তনু ত্রিপাঠী অবশ্য মনে করেন, পরীক্ষা করাননি, অথচ করোনায় আক্রান্ত কেউ বুস্টার ডোজ় নিলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে— এমন ধারণার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাঁর কথায়, “যাঁরা ওই ভাবে বুস্টার ডোজ় নিয়েছেন, তাঁদের উপরে গবেষণা করা না হলে ক্ষতির বিষয়টি নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়।”

সংক্রমণের তিন মাস পরে বুস্টার ডোজ় নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, কোভিডের ফলে শরীরে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। তখন প্রতিষেধক দেওয়ার অর্থ
একটি ডোজ় নষ্ট করা। তিন মাস পরে নিলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী হবে। তাই চিকিৎসকেরা সকলেই একবাক্যে বলছেন, “সংশয় কাটাতে মৃদু উপসর্গ থাকলেও পরীক্ষা করান। একান্তই সম্ভব না হলে নির্দিষ্ট সময়ের পরে স্পাইক অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করিয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়।
সুত্রঃ আনন্দ বাজার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

     আরও সংবাদ :